<div class="text-justify">

[img](https://www.google.com/search?q=%E0%A6%88%E0%A6%A6&tbm=isch&ved=2ahUKEwi2psuz1sX3AhWZKbcAHdDLA3YQ2-cCegQIABAA&oq=%E0%A6%88%E0%A6%A6&gs_lcp=CgNpbWcQA1DAB1j2DGCZF2gAcAB4AYABAIgBAJIBAJgBAKABAaoBC2d3cy13aXotaW1nwAEB&sclient=img&ei=kVpyYvaZD5nT3LUP0JePsAc&bih=746&biw=1536#imgrc=paxxDhC9J5nihM)
ছোটবেলার ঈদ আনন্দ আর এখনকার ঈদ আনন্দের মধ্যে অনেক পার্থক্য হয়ে গেছে।আসলে মূল পার্থক্য হলো অনুভূতি গুলোর। আগে রমজান শুরু হওয়া থেকেই ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে যেত। রোজার শুরুতেই ঈদের কেনাকাটা নিয়ে চলতো নানা পরিকল্পনা। সবার থেকে আমার জামাটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর হতে হবে। ঈদের আগে কাউকে আমার জামা দেখানো যাবে না, দেখালে পুরাতন হয়ে যাবে। নতুন জামা এখনও কেনা হয় কিন্তু আগের মত আর সেই ফিলিংস কাজ করে না।ছোটবেলায় ঈদের ১মাস আগে থেকে ঈদের আনন্দ উপলব্ধি করতাম, আর এখন ঈদের দিনও ঈদের আনন্দ উপলব্ধি হয় না।
ঈদের আগের দিন ইফতার টা তাড়াতাড়ি শেষ করেই দৌড়ে চলে যেতাম ঈদের চাঁদ দেখতে। কে কার আগে চাঁদ দেখবে এইটা নিয়ে চলতো ছোটখাটো একটা যুদ্ধ। চাঁদ দেখলেই সবাই মিলে শুরু হয়ে যেত হই হুল্লোড় আর আনন্দ মিছিল।এত খুশি লাগতো ঈদের আগের দিন রাতে ঠিক মত ঘুমই হত না। মনে মনে কত প্ল্যান করতাম,ঈদের দিন কি কি করবো,কোথায় যাবো। এই সময় গুলো অনেক মিস করি। এখন কত কত ঈদ চলে গেল, আগের মত চাঁদ দেখা হয় না।
ছোটবেলায় মেহেদী বলতে ছিলো বাটা মেহেদী। ঈদের আগের দিন আমরা ভাইবোনেরা সবাই মিলে মেহেদী পাতা সংগ্রহ করতাম। মেহেদী পাতা বাটতো আমার বড় বোনেরা। রাতে আমরা সবাই মিলে মেহেদী দিতাম,আর কাঠি দিয়ে নানা রকম নকশা করতাম।
ঈদের সময় আর একটা বিশেষ ধরনের আনন্দ হলো শহরে বসবাস করা ভাইবোনেরা যখন গ্রামে সবাই একসাথে হতো। ঈদের দুই তিন দিন আগে থেকেই শুরু হতো সেই আনন্দ। যেদিন আসতো সেদিন আমরা সবাই মিলে চলে যেতাম বাসস্ট্যান্ডে । অপেক্ষায় থাকতাম কখন আসবে,কখন সবাই একসাথে হবো। তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগগুলো নিয়ে সবাই মিলে এক সাথে বাড়িতে যেতাম। এই আনন্দগুলো কাউকে বলে বুঝানো যাবে না।
আর ভোরে ওঠার প্রতিযোগিতা তো ছিলই। শত ঠাণ্ডা থাকা সত্যেও সকাল সকাল গোসল করতাম। আম্মুর হাতে তৈরি করা সেমাই খেয়ে, নতুন পাঞ্জাবি পড়ে,সুরমা আতর দিয়ে আব্বুর সাথে চলে যেতাম ঈদগাহ্ মাঠে। নামাজ পড়ে এসে আম্মু আব্বু ,চাচা-চাচী,দাদা-দাদী সবাইকে একে একে পা ধরে সালাম করতাম আর সবার কাছে থেকে সালামি নিতাম। যদিও পা ধরে সালাম করা জায়েজ নাই,আসলে ছোটবেলায় তখন অত জানতাম না।
তারপর দুপুরে মায়ের হাতের রান্না করা খিচুড়ি গরুর মাংস খেয়ে চলে যেতাম নানু বাড়ি। সেখানে আমরা সব কাজিনরা একসাথে হতাম। আর সবাই মিলে সালামি নিতে চলে যেতাম বড়দের কাছে। সালামি নেওয়া শেষ হলেই আমাদের আর পায় কে? যেদিক দুচোখ যায় ঘুরে বেড়াতাম। সেদিন আমরা সবাই ছিলাম স্বাধীন,কাউকে কেউ কিছু বলার নাই।
ছোটবেলায় ঈদের আনন্দকে অনেক বেশি অনুভব করতে পারতাম। তখন ঈদ আসলেই কত খুশি লাগতো, কত প্ল্যান করতাম বন্ধুরা সবাই মিলে নতুন জামা পরা, একসঙ্গে নামাজ পড়া, একে ওপরের সাথে কোলাকুলি করা,এলাকাজুড়ে ঘুরে বেড়ানো, আব্বু আম্মু, চাচা-চাচী ও মুরব্বিদের কাছ থেকে সালামি আদায় করা সব গুলোই ছিলো চরম আনন্দের। । আর এখন নিজেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। এখন আর কেউ সালামি দেয় না। আগে সালামি নিতাম, এখন সালামি দিতে হয়। এখন নতুন কাপড়ের প্রতি কোনো টান নেই। অথচ ছেলেবেলায় নতুন কাপড়ের অপেক্ষায় ঘুম হতো না। শুধু ভাবতাম, কখন ঈদের দিন আসবে আর নতুন জামা পড়বো।
</div>