আমাদের ব্যক্তিগত কিছু চিন্তাভাবনা রয়েছে। চিন্তাভাবনাগুলো আমাদেরকে সাহায্য করে অন্যদের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করার জন্য। কিন্তু এই চিন্তা ভাবনা গুলো আমরা মাঝেমধ্যে অন্য লোকদের উপর সরাসরি প্রকাশ করতে পারিনা। চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হয় বিভিন্ন কারণে। যখন আমরা একটা মানুষের সাথে পরিচিত হই তার ব্যবহারে, তার কথা বলার ভঙ্গি, তার মানসিকতা। এই সবকিছু আমাদের মস্তিষ্ককে চাপ দেয় সেই মানুষটার উপর কিছু মতামত দেয়ার জন্য। কিছু কিছু মতামত আমরা প্রকাশ করি আর কিছু কিছু মতামত আমরা নিজের মধ্যেই আড়াল করে রাখি। যে মতামতগুলো আড়াল করে রাখি, সেগুলো আমরা নিজেদের কাজে প্রকাশ করার চেষ্টা করি।

 স্কুল এবং কলেজ জীবনে আমাদের অনেক বন্ধু আসে। কিছু কিছু বন্ধু আমাদের মনে জায়গা করে নেয়, আর কিছু কিছু বন্ধু থেকে আমরা নিজেরাই দূরত্ব বজায় রাখি। এই দূরত্ব বজায় রাখার পেছনে কিন্তু বিশেষ কিছু কারণ থাকে। হয়তো সেই মানুষটার সাথে আমাদের মতামতের মিল হয় না অথবা তার ব্যবহার আমার প্রত্যাশা মত হয়না। আমি বিশ্বাস করি সেই মানুষটার প্রতি যদি নেতিবাচক ভাবমূর্তি থাকে সেটার উপর ভিত্তি করেই আমাদের কাজের প্রভাব পড়ে। আপনি অনেক সময় ধরে নিজের কাছের মানুষটার উপর চুপ করে থাকতে চেষ্টা করেন, আপনি ধৈর্য ধরার চেষ্টা করেন যাতে কোন বিবাদে না জরাতে হয়। কিন্তু একটা সময় আমাদের চিন্তা ভাবনা গুলো সরাসরি মুখে প্রকাশ করতে বাধ্য হই। যা আমাদেরকে বিবাদের দিকে নিয়ে যায়।

যখন কোন ভালো বন্ধুর উপর, বন্ধুত্ব থেকেও একটা অন্যরকম অনুভূতি নিজের মধ্যে জন্ম নেয়। তখন আমরা চেষ্টা করি সেটা প্রকাশ করার। কিন্তু তার পরেও আমাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করে। কারণ আমাদের মনের মধ্যে এটা আসে, আমাদের অনুভূতিটা প্রকাশ করার পরিবর্তে হয়তো বিদ্যমান সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেকে চেষ্টা করে এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমি বরাবরই সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। কারন তার পরিবর্তে কি হতে চলেছে সেটার সাথে লড়াই করতে আমি প্রস্তুত থাকি‌। আমি আমার মনকে পরিস্কার রাখতে বেশি ভালবাসি।

 যদি আমি নিজের মনের কথা গুলো সরাসরি প্রকাশ করতে না পারি, তাহলে সেটা আমার মনের ভেতরে আমাকে কষ্ট দিতে শুরু করে। আমার দীর্ঘদিনের একজন ভালো বন্ধু ছিল। যার সাথে আমার স্কুল জীবন থেকেই পরিচয়। সে আমার এতটাই কাছের বন্ধু ছিল যার সব কথাই আমি অন্ধের মত বিশ্বাস করতে বাধ্য হতাম। কোন কথা যদি মনে হতো যে না সে মিথ্যা বলছে তাও আমি সেটাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম। একটা সময় আমার এই চুপ থাকা আর তার মিথ্যা বলা সম্পর্কটা মধ্যে কাটা ঢুকিয়ে দিচ্ছিল যেটা আমার বিরক্ত করছিল। আমি চেষ্টা করি আমার মনের ভেতরের কথাগুলো তাকে প্রকাশ করার। আমি তাকে নিয়ে কি ভাবছে বা তাকে নিয়ে আমার মনের ভিতরে কি চলছে, সেগুলো আমি তাকে খুলে বলেছিলাম। 

সে আমার কথা বোঝার আগেই আমার সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তারপরও আমি প্রশান্তি অনুভব করছিলাম, কারণ আমার মনের মধ্যে যা চলছিল সেগুলো আমি প্রকাশ করেছি। আপনি নিজের মনের কথাগুলো যখন শোনার চেষ্টা করবেন তখনই আপনি আত্মতৃপ্তি পাবেন। কারণ আমাদের মনের কথাগুলো সব সময় ভুল হয়না। যখন আমরা একজন মানুষকে দেখে বিচার করি সেটা যেমন মাঝে মধ্যে ভুল হয় আবার মাঝেমধ্যে ঠিক হয়। নিজের মনের ভাষা প্রকাশ করা সবারই অধিকার রয়েছে। তাই সেই অধিকার গুলো কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সম্পর্কগুলোকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হয়। কারণ আপনি যদি কাউকে নিয়ে নিজের মনের মধ্যে কিন্তু রাখেন, তাহলে কখনই সেই সম্পর্কটা ভবিষ্যতে অগ্রসর হবে না।


![IMG_20220201_000453_556.jpg](https://images.hive.blog/DQmdN8Ms7y2gRLk5WoBmMkfyyP5JMRUW4arndXzzWDVYnpj/IMG_20220201_000453_556.jpg)