রিমঝিম বৃষ্টিতে পরী ভিজতে ভিজতে হেঁটে যাচ্ছে। তার হাঁটার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হাঁটছে।বৃষ্টির পানি মাথা থেকে ঝরে গাল বেয়ে পড়ছে।এসবের দিকে খেয়াল নেই পরীর।আপন মনে হেঁটে চলছে। হঠাৎ একটা সাইকেল এসে স্বজোরে থেমে গেলো তার পাশে।
পরী থেমে উচ্চস্বরে কিছু একটা বলতে যাবে, তখনি কিছু না বলে হেসে বলে, দাদা তুই! আমি ভাবলাম কে না কে। তাই রেগে গেলাম।দাদা গম্ভীর কণ্ঠে, তোর কি বোধ বুদ্ধি কিছু আছে।
এই অসময়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আরামছে হাঁটছিস। জ্বর আসলে কি হবে।
-আমার বৃষ্টির পানিতে জ্বর আসে না দাদা তুই এটা জানিস।আর আসলেই বা কি তোর মতো দাদা যার আছে তার কিসে ভয়।
-একদম বাজে বকবিনা, পরী। তাড়াতাড়ি সাইকেলে উঠে বস বাড়িতে গিয়ে শুকনো কাপড় পড়তে হবে।ভিজা কাপড় গায়ে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না।
পরী হেসে হেসে সাইকেলে বসে গেলো।
আচ্ছা দাদা তুই যে বলিস মা যে মারা গেলো সেদিন সারাদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো।বৃষ্টির পানি আমার শরীরে পড়লে আমি মায়ের গন্ধ পাই। তাই বৃষ্টি হলে আমি ভিজতে বাদ দেয় না।মায়ের গন্ধ পাওয়ার সুযোগ আমি কিভাবে মিস করবো বল।কথা শেষ হওয়ার আগেই বাড়ি পৌঁছে গেলো দুইজন।
পরী সাইকেল থেকে নেমে যাচ্ছে। আকাশ পিছন থেকে বললো। দেরী করবি না কাপড় চেঞ্জ করে নে তাড়াতাড়ি। আচ্ছা বলে পরী চলে গেলো।
এতোক্ষণ যাদের কথোপকথন চলছিলো তারা হলো আকাশ আর পরী। দুই ভাইবোন।পরী আকাশের থেকে বারো বছরের ছোট। পরী যখন ছয়মাসের পেটে তখন ওদের বাবা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। একমাত্র উপার্জনকারী মারা গেলে পরিবারের কি অবস্থা হয় বলার অপেক্ষা রাখেনা।আবার পরিবার যদি হয় দিনে আনে দিনে খায় তাহলেতো খাওয়া দাওয়ায় বন্ধ। আকাশ তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে।
আকাশের মা পরীকে পেটে নিয়ে পাশের বাড়িতে কাজ নেয়।পরী যখন নয় মাসের পেটে তখন বড় কলসীর পানি উঠাতে গিয়ে পরীর মা পড়ে যায়। সেদিনই পরীর জন্ম হয় কিন্তু পরীর মা মারা যায়।সবাই আকাশকে বলে এই ছোট মেয়ে তুই পালতে পারবি না।পালক দিয়ে দে।আকাশ কারো কথা শুনেনি।ছোট্ট মেয়েটার নাম রাখে পরী।ওদের একটা ছাগল ছিলো সেই ছাগলের দুধ আকাশ পরী কে খাওয়ায়।ছোট বোনকে রেখে কাজও করতে পারে না।লাকড়ি কুড়িয়ে বিক্রি করে একদিন, কচুর লতি কুড়িয়ে বিক্রি করে আরেকদিন এভাবে পরীকে নিয়ে যা করতে পারে তাই করে আকাশ।
এভাবে যা টাকা আসে তা থেকে অল্প অল্প জমিয়ে একটা বাদাম ভাজার কড়াই,পাঁচ কেজি বাদাম আর বাদাম বহন করার একটা ঝুড়ি কিনে আকাশ।পরী ঘুমালে বাদাম ভাজে। এরপর বাদাম আর পরীকে নিয়ে বের হয়ে যায়। স্কুলের সামনে পাড়ায় হেঁটে বিক্রি করে। বিক্রির কিছু টাকা প্রতিদিন জমায়। এভাবে টাকা জমিয়ে একটা ভ্যান গাড়ি কিনে বাদামের ব্যবসা শুরু করে।
পরীও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। পরী আকাশের জীবন। পরীর সব আবদার সে হাঁসি মুখে পূরণ করে।এভাবে বাদামের ব্যবসা করে বাজারে একটা দোকান নিলো।এরপর আকাশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।এখন পরী কলেজে পড়ে।পরী তার দাদাকে বিয়ে করিয়ে বউ আনতে চায়। কিন্তু আকাশ রাজি হয়না।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।ইচ্ছার জোড়ে একটা বাচ্চা কিভাবে আরেকটা বাচ্চা বড় করছে তা এই গল্প দেখলেই বুঝা যায়।
আসলে এমন কাহিনি অনেক আছে অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে কতো মানুষ দুরূহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নিজের সাথে সাথে আশাপাশের মানুষের জীবন ঘুচিয়ে দিয়েছে।
<center></center><center>[](https://images.app.goo.gl/8SNxLpjfcsNFESMB6)</center>