create account

দেবী by zihad16

View this thread on: hive.blogpeakd.comecency.com
· @zihad16 ·
$27.29
দেবী
করিম সাহেব পুতুল টার দিকে অবাক চোখে তাকালেন।
ক দিন ধরেই করিম সাহেব তার ছেলে নাসিম কে এই পুতুল টা নিয়ে খেলতে দেখছেন। পুতুল না বলে ঠিক পাথরের মূর্তি বলাই ঠিক হবে। একে বারেই ছোট, খুব বেশি হলে চার ইঞ্চি লম্বা হবে, কালো পাথরের একটা টূকরো, তার উপর খোদাই করে বানানো।মুর্তি টা বেশ ভয়াবহ রকমের, একটী নারী মুর্তি, চার হাত, চেহারা টা ছোট হলেও কেমন অদ্ভুত রকমের বিভৎস, চোখ দুটো তে লাল রঙের দুটো পাথর বসানো। বেশ ক দিন ধরেই করিম সাহেবের চার বছরের ছেলে টা এই মুর্তি টা নিয়ে লেগে আছে। একদম কাছ ছাড়া করে না, এখন কোন কারনে ড্রয়িং রুমে ফেলে চলে গেছে কে জানে!
করিম সাহেব হাতে নিয়ে মুর্তি টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছেন, এমন সময় নাসিম দৌড়াতে দৌড়াতে এল।এসেই করিম সাহেবের হাতে মুর্তি টা দেখে খুশি হয়ে বলল, ঐতো আমার পুতুল!বাবা, আমায় পুতুল টা দাও না!
করিম সাহেব তার একমাত্র পুত্রকে খুব ভালবাসেন। ধন দৌলত অফুরন্ত থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ী করিম সাহেব অনেক বছর পুত্রহীন থাকার পর নাসিম কে পেয়েছেন।
তিনি নাসিম কে সস্নেহে ডেকে নিয়ে কোলে বসিয়ে বললেন, বাবা, এই মুর্তি টা কোথায় পেয়েছ?
নাসিম বড় বড় চোখ করে বলল, পাই নি তো, ও নিজে নিজেই আমার কাছে এসেছে! রাতে যখন ঘুমাই, তখন আগে আসত, এখন সে পুতুল হয়ে আমার কাছে একেবারে চলে এসেছে।
করিম সাহেব অবাক হয়ে বললেন, তোমার কাছে চলে এসেছে? এটা কে?
নাসিম এক গাল হেসে বলল, ওমা , একে চেন না? এতো একজন দেবী। আমার বন্ধু দেবী।
করিম সাহেবের মুখ শক্ত হল। তিনি শীতল গলায় বললেন, এসব কথা বার্তা তোমায় কে বলেছে?
নাসিম মৃদু স্বরে বলল,ঐ তো বলল।জান বাবা, ওড় খুব খিদে পায়। ও যেখানে থাকে সেখানে তাকে কেও খেতে দেয় না, তাই সে আমার কাছে এসেছে। খুব খিদে ওর। ও শয়তান দের ধরে খেয়ে ফেলে।
করিম সাহেব প্রায় চিৎ কার করে বললেন, চুপ কর!
নাসিমের ভারাক্রান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তার কষ্ট হল হঠাৎ। নরম গলায় বললেন, বাবা এসব বলতে নেই। এসব মিথ্যে। তুমি এখন পুতুল টা নিয়ে খেলো না, তোমায় আমি আরো সুন্দর পুতুল কিনে দেব।
নাসিম মাথা নিচু করে বলল, কিন্তু আমার তো ঐ দেবী কেই চাই!
করিম সাহেব উঠে দাড়ালেন। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ঠান্ডা গলায় বললেন, নিজের ঘরে যাও বাবা।
ঘর থেকে যখন দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যাচ্ছেন, তখন নাসিমের মৃদু গলায় শুনতে পেলেন, বাবা, তুমি কি শয়তান?
মাথা কাজ করছে না করিম সাহেবের, নাসিমের কথা শুনেই দাঁড়িয়ে গেলেন। হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে রাখা মুর্তি টার দিকে তাকালেন তিনি। অদ্ভুত রকমের ভয়াবহ লাল পাথরের চোখ গুলো।

*************************
নাসিমের আজ মন খারাপ। বাবা তার কাছ থেকে তার সবচেয়ে প্রিয় পুতুল টা নিয়ে এসেছে। সেই অভিমানে রাতে কিছু খেল না সে।নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। 
শুনসান শীতের রাত, কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুম এসে গেল নাসিমের। বাবা আজ আসে নি তাকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিতে। আর মা তো নেই, মা কখনো আসে না আর। কোথায় যে চলে গেল মা টা!
চোখ বুঝতেই হঠাৎ কার যেন পায়ে হাটার আওয়াজ পাওয়া গেল ঘরে। নাসিম চোখ মেলে তাকিয়েই খুশিতে হেসে ফেলল। ঐ তো, তার বন্ধু দেবী এসেছে।

*************************
করিম সাহেব গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে দাড়ালেন। দেহ অল্প অল্প টলছে, ভালই নেশা ধরেছে তাকে। টেবিলের ওপরে সেই মুর্তি টা রাখা, করিম সাহেব সেটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন।
চেহারা টা কেমন চেনা চেনা ঠেকছে তার। হিন্দুদের এরকম কোন দেবী আছে কি, যাকে তার পুজো করে? কে জানে। বাজে একটা মুর্তি, এসব নিয়ে বাচ্চাদের খেলা করার কোন মানেই হয় না। আর নাসিম কে এসব বাজে কথা গুলো কে বলল? ঘরে তিনি আর নাসিম ছাড়া তো আর কেও নেই। আর আছে দুটো কাজের মহিলা, একজন দারোয়ান। তবে কি এদের মধ্যেই কেও? নাহ, কাল সকালেই সবাইকে ডেকে একটা কড়া ধমক লাগাতে হবে।
নাসিমের শেষ কথা টা তার কানে বাজছে।
বাবা, তুমি কি শয়তান?
শরীর আবার কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে নাসিম সাহেবের, কাঁপা হাতে আরেক টু মদ ঢাললেন তিনি গ্লাসে।
না না, সে তো হতে পারে না। তার ভুলের কথা একমাত্র তার বন্ধু রায়হান ছাড়া আর কেও জানে না।
ভুল কি সবাই করে না? তার প্রায়শ্চিত্ত ও তো সারা জীবন ধরেই করে যাচ্ছেন করিম সাহেব। 
আজ থেকে পাঁচ বছর আগের সেই রাতে যে ভুলটা তিনি করেছিলেন, তার জন্য প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহুর্ত তিনি জ্বলছেন। কিন্তু দোষ কি তার একার ছিল? সেদিন রাতে বাসায় ফেরার পরেই যদি তানিয়া তাকে অমন করে না ধরত, অমন করে রাগে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে ঝগড়া না শুরু করত, তাহলে কি ব্যপারটা এতদূর গড়াত? সব পুরুষেরাই তো কখনো না কখনো দুর্বল হয়, কারই বা চরিত্র একে বারেই পরিষ্কার, বিশেষ করে করিম সাহেবের মত বিত্ত বৈভব যাদের আছে?
বিছানার দিকে তাকালেন করিম সাহেব। ওই বিছানাতেই ধাক্কা মেরে তানিয়া কে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি, তারপর হাতের কাছে থাকা পেপার ওয়েট টা ছুড়ে মেরেছিলেন তানিয়া কে লক্ষ্য করে।
তার আধা ঘন্টা পর তিনি কাঁপা হাতে বন্ধু রায়হান কে ফোন করে জানিয়েছিলেন সব, তানিয়ার রক্তাক্ত নিথর দেহের পাশে বসে।
রায়হান সব শুনে বলেছিল, চিন্তা করিস না বন্ধু, ভয় পাস না, আমি আসতেছি।
সেদিন রাতে রায়হান ই গাড়ি নিয়ে এসে তানিয়ার লাশ টা নিয়ে গেছিল তার কারখানা এলাকায়, শহর থেকে বেশ দূরে। তারপর কী হয়েছিল তা করিম সাহেব জানেন না।
মদের গ্লাসে আরেকটা চুমুক দিলেন করিম সাহেব। যা হয়েছিল তা হয়েছিল, এসব এখন ভেবে আর লাভ নেই। গ্লাস টা রেখে টলতে টলতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
উজ্জ্বল হলদে ল্যাম্প জ্বলছিল টেবিলের উপর, হঠাৎ করে তা ধুক ধুক করে নিভে গেল।
বিশাল বেলজিয়াম কাচ লাগানো জানলা দিয়ে অল্প চাদের আলো ঢুকছে ঘরে। কিছুটা আলো পড়ছে বিছানার উপর।
আস্তে আস্তে ঘরে কার যেন পায়ে হেঁটে চলার শব্দ পাওয়া গেল।
করিম সাহেব চোখ খুললেন অনেক কষ্টে,মাথা প্রচন্ড ঝিম ঝিম করছে । এখন কি মধ্য রাত?
কেমন এক অদ্ভুত আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না?
মনে হচ্ছে না কেও যেন পা টেনে টেনে তার বিছানার দিকে এগিয়ে আসছে?
দুটো মৃদু লাল আলো চোখে পড়ল অন্ধকারে।
আলো গুলি আরো উজ্জ্বল হচ্ছে ধীরে ধীরে।
করিম সাহেব প্রানপন চেষ্টা করলেন বিছানা থেকে নেমে যাওয়ার। পারলেন না।
লাল আলো দুটো তীব্রতর হল।ফ্যাকাশে চাঁদের আলোয় অষ্পষ্ট একটি মুখ।
এক কৃষ্ণাঙ্গী কিশোরীর মুখ।
কিশোরীর চোখ দুটো উজ্জ্বল লাল।তীব্র রকমের লাল।
কিশোরীর ঠোট একটু ফাঁক হল। দেখা গেল তীক্ষ্ণ সর্পিল দাত।
প্রচন্ড যন্ত্রনায় জ্ঞান হারাবার আগে করিম সাহেব বুঝতে পারলেন কিশোরী টি হাসতে হাসতে দু হাতে করিম সাহেবের বুক ছিঁড়ে ফেলছে।

*************************

কী বুঝলেন সার? সাব ইন্সপেকটর সায়েদ জিজ্ঞেস করলেন।
ইন্সপেকটর রওফ চিন্তিত মুখে বিছানার দিকে তাকিয়ে বললেন, এখানেই তো সমস্যা সায়েদ। সাধা সিধে খুন হলে তাও মেনে নেয়া যেত। কিন্তু এভাবে খুন কে করে?
সায়েদ ঠোট কামড়ে বলল, খুব নৃশংস ব্যপার সার। এটা সত্যি।
শুধু নৃশংস বলে তো নয়,বললেন রওফ-খুব রহস্যজনক মনে হয় না? লাশটা দেখ। এভাবে বুকের মাঝখানে ছিঁড়ে ফাক করে দেয়া কিভাবে সম্ভব? আর ধরন দেখে যা মনে হচ্ছে, এমন তো কোন ধরনের অস্ত্র দিয়ে করা সম্ভব না।
ইন্সপেকটর সায়েদ অবাক হয়ে বলল, খালি হাতে? এটা কিভাবে হয় সার?
রওফ বললেন, আরো ভয়ানক ব্যপার হল ভদ্রলোকের হৃৎপিন্ড নেই। গায়েব। এছাড়াও ভেতরকার আরো কি কি গায়েব কে জানে।তবে সবচেয়ে অবাক ব্যপার কী জান?
সায়েদ জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল।
রওফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আজ থেকে দু বছর আগে রাজশাহী তেও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল। একইরকম প্যাটার্ন। এই ভাবে বুক ছিঁড়ে হৃৎপিণ্ড গায়েব করে দিয়েছিল।যদ্দুর মনে পড়ে ভদ্রলোকের নাম রায়হান শরীফ ।খুব নাম করা বিজনেস ম্যান ছিলেন তিনিও।
সায়েদ কিছু না বলে এদিক ওদিক তাকায়। টেবিলের উপর নাসিমের প্রিয় মুর্তি টা দাড়িয়ে।রক্ত শুকিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে লেগে আছে মুর্তির গায়ে।রোদের আলোয় লাল পাথরের চোখ দুটো চিক চিক করে ওঠে।





(বহুদিন পরে ফেরা। প্রায় ছ মাস কেটে গেছে হাজারো ব্যস্ততায়। আছেন কেমন সবাই?
বেশ ক বছর আগের একখানা গল্প দিলুম। ভৌতিক বলতেই পারতাম, কিন্তু ম্যাকাব্রে শব্দখান যায় বেশি এ ধরণের গল্পের সাথে। না?
কখন জানি লাভক্রাফট হওয়ার সখ হয়েছিল  :P অতিপ্রাকৃত গল্পের রহস্য ভয় আর শিহরণে আমার যে ভালবাসা, তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। শুভেচ্ছা রইল।
👍  , , , , , , , ,
properties (23)
authorzihad16
permlink31ffa5
categorybangla
json_metadata{"tags":["bangla","story","writing","steem"],"app":"steemit/0.1","format":"markdown"}
created2018-02-24 04:31:57
last_update2018-02-24 04:31:57
depth0
children3
last_payout2018-03-03 04:31:57
cashout_time1969-12-31 23:59:59
total_payout_value20.481 HBD
curator_payout_value6.806 HBD
pending_payout_value0.000 HBD
promoted0.000 HBD
body_length6,681
author_reputation680,759,442,626
root_titleদেবী
beneficiaries[]
max_accepted_payout1,000,000.000 HBD
percent_hbd10,000
post_id40,011,872
net_rshares5,063,097,329,972
author_curate_reward""
vote details (9)
@boomerang ·
This post has received a 4.29 % upvote from @boomerang thanks to: @zihad16
properties (22)
authorboomerang
permlinkre-31ffa5-20180224t085018
categorybangla
json_metadata"{"app": "pysteem/0.5.6"}"
created2018-02-24 08:50:18
last_update2018-02-24 08:50:18
depth1
children0
last_payout2018-03-03 08:50:18
cashout_time1969-12-31 23:59:59
total_payout_value0.000 HBD
curator_payout_value0.000 HBD
pending_payout_value0.000 HBD
promoted0.000 HBD
body_length74
author_reputation1,273,205,827,891
root_titleদেবী
beneficiaries[]
max_accepted_payout1,000,000.000 HBD
percent_hbd10,000
post_id40,046,090
net_rshares0
@mercurybot ·
re-zihad16-31ffa5-20180224t082150891z
You got a 8.26% upvote from @mercurybot courtesy of @zihad16!
properties (22)
authormercurybot
permlinkre-zihad16-31ffa5-20180224t082150891z
categorybangla
json_metadata{"app":"postpromoter/1.7.4"}
created2018-02-24 08:21:51
last_update2018-02-24 08:21:51
depth1
children0
last_payout2018-03-03 08:21:51
cashout_time1969-12-31 23:59:59
total_payout_value0.000 HBD
curator_payout_value0.000 HBD
pending_payout_value0.000 HBD
promoted0.000 HBD
body_length61
author_reputation732,353,368,070
root_titleদেবী
beneficiaries[]
max_accepted_payout1,000,000.000 HBD
percent_hbd10,000
post_id40,041,365
net_rshares0
@nicestbot ·
You have received an upvote from @nicestbot. I am an automated curation bot trying to make minnows happy.
👍  
properties (23)
authornicestbot
permlinkre-31ffa5-20180224t080503
categorybangla
json_metadata""
created2018-02-24 08:05:12
last_update2018-02-24 08:05:12
depth1
children0
last_payout2018-03-03 08:05:12
cashout_time1969-12-31 23:59:59
total_payout_value0.000 HBD
curator_payout_value0.000 HBD
pending_payout_value0.000 HBD
promoted0.000 HBD
body_length105
author_reputation124,184,557,298
root_titleদেবী
beneficiaries[]
max_accepted_payout1,000,000.000 HBD
percent_hbd10,000
post_id40,038,386
net_rshares613,063,915
author_curate_reward""
vote details (1)